মানুষ যখন দুনিয়ার জীবনে আসে, তখন তার একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিস হলো রিজিক। অনেকের ধারণা রিজিক মানে শুধু অর্থ কিংবা সম্পদ। কিন্তু বাস্তবে রিজিকের ধারণা অনেক বিস্তৃত। স্বাস্থ্য, জ্ঞান, সময়, সন্তান, পরিবার, শান্তি—এসবই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামের আলোকে বোঝা যায়, রিজিক শুধু উপার্জনের বিষয় নয়, বরং বরকত, সন্তুষ্টি এবং আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের সঠিক ব্যবহারও এর ভেতরে অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে স্পষ্ট বলেছেন—
وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا
“পৃথিবীতে কোনো প্রাণী নেই যার রিজিক আল্লাহর উপর নির্ভরশীল নয়।” (সূরা হুদ: ৬)
অর্থাৎ প্রতিটি প্রাণীর রিজিক আল্লাহ আগে থেকেই লিখে রেখেছেন। তবে মানুষকে চেষ্টা করতে হয়, দোয়া করতে হয় এবং হালাল পথে আমল করতে হয়, যাতে রিজিকের দরজা খুলে যায়।
ইসলামে রিজিকের ব্যাখ্যা
রিজিক কেবল অর্থ নয়
অনেকে মনে করেন রিজিক মানেই টাকা। কিন্তু ইসলাম বলছে—
-
সুস্থ দেহ রিজিক।
-
সৎ সন্তান রিজিক।
-
হালাল জ্ঞান রিজিক।
-
শান্তিপূর্ণ সংসার রিজিক।
-
অল্প আয়েও সুখী হওয়া রিজিক।
কোরআন ও হাদিসে রিজিকের উল্লেখ
কোরআনে বহু জায়গায় রিজিকের কথা এসেছে। যেমন—
-
“আল্লাহ যাকে চান তাকে সীমাহীন রিজিক দেন, আবার যাকে চান তার রিজিক সীমিত করে দেন।” (সূরা রা’দ: ২৬)
-
নবী করিম ﷺ বলেছেন:
“নিশ্চয়ই রিজিক আসমান থেকে নাযিল হয় যেমন বৃষ্টি আসমান থেকে নাযিল হয়।” (মুসনাদ আহমাদ)
রিজিকের মূল উৎস: আল্লাহর উপর ভরসা (তাওয়াক্কুল)
কেন তাওয়াক্কুল জরুরি
আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখা মানেই হলো বিশ্বাস করা যে, রিজিক শুধুমাত্র তাঁর কাছেই আছে। মানুষ যতই চেষ্টা করুক, আল্লাহ না চাইলে সে কিছুই পাবে না।
তাওয়াক্কুল ও চেষ্টা একসাথে
নবীজী ﷺ বলেছেন—
“যদি তোমরা আল্লাহর উপর সঠিকভাবে ভরসা করতে, তবে তোমাদের রিজিক আসতো ঠিক যেমন পাখি সকালে ক্ষুধার্ত বের হয় আর সন্ধ্যায় পেট ভরে ফিরে আসে।” (তিরমিজি)
অর্থাৎ চেষ্টা করতে হবে, কিন্তু অন্তরে ভরসা রাখতে হবে আল্লাহর উপর।
দোয়া: রিজিকের দরজা খোলার প্রথম উপায়
কোরআন ও হাদিসে দোয়ার গুরুত্ব
আল্লাহ বলেন—
“আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।” (সূরা গাফির: ৬০)
দোয়া হলো রিজিক আনার সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র।
রিজিক বৃদ্ধির জন্য বিশেষ দোয়া
-
رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ
(হে আমার প্রভু! তুমি যে কল্যাণ আমার নিকট নাযিল করবে, আমি তার প্রয়োজনীয়। – সূরা কাসাস: ২৪) -
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা রিজকান তইয়্যিবা, ওয়া ইলমান নাফিঅান, ওয়া আমালান মুতাক্বাব্বালা।”
(হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে হালাল রিজিক, উপকারী জ্ঞান এবং কবুলকৃত আমল প্রার্থনা করছি।)
আমল: রিজিকের বরকত আনার উপায়
নামাজ ও ইবাদতের প্রভাব
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুধু ইবাদত নয়, বরং রিজিকের দরজা খোলারও একটি মাধ্যম। হাদিসে এসেছে—
“যে ব্যক্তি নামাজের প্রতি যত্নশীল হবে, আল্লাহ তার রিজিকের ব্যাপারে সহজ করে দেবেন।”
হালাল উপার্জন
হারাম উপার্জন রিজিক থেকে বরকত উঠিয়ে নেয়। হাদিসে এসেছে—
“যে শরীর হারাম খাদ্যে লালিত হয়, তার জন্য জান্নাত হারাম।” (বায়হাকি)
সদকা ও দান: রিজিক বৃদ্ধির রহস্য
দান কিভাবে বরকত আনে
আল্লাহ বলেন—
“তোমরা যা কিছু আল্লাহর পথে ব্যয় করবে, তিনি তার প্রতিদান দিবেন।” (সূরা সাবা: ৩৯)
বাস্তব উদাহরণ
অনেক ধনী মানুষ দান-খয়রাতের কারণে আল্লাহ তাদের সম্পদ বহুগুণ বাড়িয়ে দেন। আবার অনেক দরিদ্র লোক অল্প আয় থেকেও দান করে, আর আল্লাহ তাদের জীবনে বরকত আনেন।
ইস্তিগফার ও তওবা: রিজিকের পথে অন্তরায় দূর করা
গুনাহ রিজিক কমায় কেন
পাপ কাজ মানুষের রিজিক কমিয়ে দেয়। এজন্যই ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেছিলেন—
“আমি দেখেছি, গুনাহ রিজিক কেড়ে নেয়।”
ইস্তিগফার করার সুফল
নূহ (আ.) তার কওমকে বলেছিলেন—
“তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তোমাদের উপর আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান দ্বারা শক্তিশালী করবেন।” (সূরা নূহ: ১০-১২)
সকালে আমল: ফজরের পর রিজিকের দরজা
নবীজী ﷺ বলেছেন—
“হে আল্লাহ! আমার উম্মতের সকালকে বরকতময় করে দাও।” (আবু দাউদ)
ফজরের পর কোরআন তিলাওয়াত, যিকির ও কাজ শুরু করলে রিজিকের দরজা দ্রুত খুলে যায়।
আল্লাহর স্মরণ (যিকির) ও রিজিক
যিকির মানুষকে আল্লাহর নিকটে টেনে আনে, আর আল্লাহ নিকটে আসলে রিজিক সহজ হয়।
কিছু যিকির:
-
“সুবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহি”
-
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”
-
“আস্তাগফিরুল্লাহ”
চেষ্টা ও পরিশ্রম: রিজিকের জন্য আবশ্যক শর্ত
ইসলামে আলস্যকে নিন্দা করা হয়েছে। মানুষকে চেষ্টা করতে হবে, হালাল পথে কাজ করতে হবে। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন—
“মানুষ যা চেষ্টা করে, তাই সে পায়।” (সূরা নাজম: ৩৯)
সম্পর্কের রক্ষণাবেক্ষণ: রিজিক বৃদ্ধির উপায়
হাদিসে আছে—
“যে ব্যক্তি রিজিকের প্রশস্ততা ও আয়ু বৃদ্ধির আশা করে, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।” (বুখারি, মুসলিম)
কৃতজ্ঞতা ও শোকর: রিজিক বৃদ্ধির মূল চাবি
আল্লাহ বলেন—
“তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, আমি অবশ্যই তোমাদের রিজিক বাড়িয়ে দেব।” (সূরা ইবরাহীম: ৭)
রিজিক কমে যাওয়ার কারণগুলো
-
হারাম উপার্জন
-
মিথ্যা ও প্রতারণা
-
আলস্য ও অলসতা
-
নামাজে অবহেলা
-
গুনাহের কাজ
রিজিকের বরকত চেনার উপায়
-
কম আয়েও যদি শান্তি থাকে, বুঝতে হবে বরকত আছে।
-
বেশি আয় হলেও যদি অশান্তি থাকে, তবে বরকত নেই।
রিজিক আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, তবে দোয়া, আমল, হালাল উপার্জন, সদকা, ইস্তিগফার এবং কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে রিজিকের দরজা আরও প্রশস্ত হয়। মূল কথা হলো—আল্লাহর উপর ভরসা রাখা, হালাল পথে চেষ্টা করা এবং জীবনে গুনাহ থেকে দূরে থাকা।
Read More: আল্লাহ যেভাবে রিজিক লিখে দেন – জানলে অবাক হবেন আপনি
রিজিক বৃদ্ধির দোয়া
রিজিক বাড়ানোর উপায়
ইসলামিক রিজিক
দোয়া ও আমল রিজিক
রিজিকের দরজা খোলার দোয়া
হালাল রিজিক আনার উপায়
ইস্তিগফার ও রিজিক
সদকা ও রিজিক বৃদ্ধি
আল্লাহর উপর ভরসা ও রিজিক
রিজিকের বরকত

Post a Comment